প্রচ্ছদ / খবর / ডেঙ্গু: স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে বাগেরহাটে?

ডেঙ্গু: স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে বাগেরহাটে?

নিজস্ব প্রতিবেদকবাগেরহাট ইনফো ডটকম

সরকারি হিসাবে শনিবার পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১১
তবে শহরের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শনাক্ত এবং চিকিৎসা নেওয়া রোগী মিলিয়ে এ সংখ্যা ৭০ উর্ধ বলে ধারণা করা হচ্ছে

আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

সম্প্রতি ঢাকায় না গিয়েও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রন্ত হয়ে বাগেরহাটের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক বৃদ্ধ। গেল এক মাসের অধিক সময়ের মাঝে কখনো জেলার বাইরে যাননি ওই ব্যক্তি।

গেল দেড় মাসের মাঝে জেলার বাইরে না গিয়েও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এমন আরেক নারী যাত্রাপুরে নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যা নির্দেশ করে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এই রোগীরা।

তবে কি ডেঙ্গুর বাহক মশা এডিস ছড়িয়েছে বাগেরহাটেও?

তবে এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। কারণ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা শনাক্তের যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি বা জনবল নেই তাদের।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে শনিবার পর্যন্ত জেলায় ১১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনকে হাসপাতলে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাকি ৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়।

ভর্তি ৫ জনের একজন চিকিৎসা শেষে শনিবার (৪ আগস্ট) বাড়িতে ফিরে গেছেন, ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বর্তমানে সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ওই ১১ জনের বাড়ি বাগেরহাট সদর, কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলা বিভিন্ন এলাকায়।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের এই হিসাবে কেবল জেলার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। শহরের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো তথ্য অনুযায়ী বাগেরহাটে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সত্তর উর্ধ।

শহরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সূত্রে জানা গেছে, কেবল গেল ১০ দিনেই তাদের ডায়গনস্টিকে পরীক্ষা করতে আসা ৪২ জনের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।

এতদিন জেলায় ডেঙ্গু শনাক্ত রোগীদের প্রায় সবাই ঢাকা থেকে এসে আক্রান্ত হয়েছে বলা হচ্ছিল। তবে বর্তমানে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত জগদীশ সাহা (৭০) গেল এক মাসের মাঝে জেলার বাইরে যাননি বলে দাবি তার পরিবারের।

জগদীশ সাহা বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের কোন্ডলা গ্রামের প্রয়াত শ্যামা চন্দ্র সাহার ছেলে। গেল বৃহস্পতিবার বিকেলে এনএস১  পরীক্ষার পর তাঁর ডেঙ্গু থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৩১ জুলাই বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।

হাসপাতালে জগদীশ সাহার সাথে থাকা তাঁর নাতী বিভূতি কুমার সাহা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমার নানা বাড়িতেই থাকতেন। গত এক-দেড় মাসের মাঝে তিনি বাইরে কোথাও যাননি। গত মাসের (জুলাই) ২৩ তারিখে তাঁর জ্বর হয়। আমরা ২৫ তারিখে এক ডাক্তার দেখাই। তাতে কোন উন্নতি না হওয়ায় গত বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি করি।

পরে পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। শনিবার ডাক্তার দেখে আরো কিছু পরীক্ষা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শেখ ইমরান মোহাম্মদ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি থাকা দু’জনের মধ্যে একজন কিছুটা সুস্থ্য হওয়াতে আমরা তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে ভর্তি থাকা রোগীরও চিকিৎসা চলছে।

তবে তিনি যেহেতু সম্প্রতি ঢাকা বা জেলার বাইরে কোথাও যায়নি, সেক্ষেত্রে বাগেরহাটেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে ওই রোগীকে আরো কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার যাত্রাপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সিনিগ্ধা আক্তার প্রিয়া যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোল্লা আব্দুল মতিনের স্ত্রী।

যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমার স্ত্রী গত সপ্তাহে জ্বরে আক্রান্ত হলে শহরের একটি বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারে তার রক্ত পরীক্ষা করাই। পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর থেকে বাড়িতে তার চিকিৎসা চলছে।

তিনি আরো বলেন, গেল দেড় মাসে তাঁর স্ত্রী বাইরে কোথাও যায় নি। তাই তাঁর ধারণা করছেন এডিস মশার অস্তিত নিজ এলাকাতেও আছে। শনিবার (৩ আগস্ট) তাঁর ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামেও একব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে। গেল ১৫-২০ দিনের মাঝে সেও শহরের বাইরে কোথাও যায়নি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার। এই গবেষকের পিএইচডির বিষয় ছিল মশা। ঢাকার বাইরে এডিস মশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় সব বড় শহরে এডিস মশা আছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে জরিপে এটা দেখেছি।’

এডিস মশার দুটি প্রজাতি—এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রধানত এডিস ইজিপটাইয়ের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। কম হলেও এডিস অ্যালবোপিকটাসও ডেঙ্গু ছড়ায়। গ্রামাঞ্চলে এডিস অ্যালবোপিকটাস বেশি। এডিস ইজিপটাই বেশি শহর এলাকায়।

বাগেরহাটের ডেপুটি সিভিল সার্জন পুলক দেবনাথ বলেন, ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসার বাগেরহাট সদর হাসপাতালে বিশেষ সেল খোলা হয়েছে। কারো ডেঙ্গুর উপশম দেখা দিলে হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য আসতে পরামর্শ দেন।

ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পেতে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে পাশাপাশি মশার বিস্তার রোধে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সাথে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তার।

এদিকে ডেঙ্গু রোধে মশক নিধন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে সব এলাকায়। শহরের বিভিন্ন এলাকাতে মশা নিধনে ওষুধ ছিটান হচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতন করার পাশাপাশি তাদের নিয়ে বিদ্যালয়সহ চারপাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম করছে প্রশাসন।

এসএইচ//এসআই/বিআই/৩ আগস্ট, ২০১৯

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ