প্রচ্ছদ / খবর / বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের স্বপক্ষে জনমত গড়তে সরকারি প্রচেষ্টা; রামপালে মত বিনিময় সভা করল বিআইএফপিসিএল

বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের স্বপক্ষে জনমত গড়তে সরকারি প্রচেষ্টা; রামপালে মত বিনিময় সভা করল বিআইএফপিসিএল

বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের স্বপক্ষে জনমত গড়তে সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেডশীপ কোল পাওয়ার কোম্পানী(প্রাঃ) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) এর উদ্যোগে রমপালে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান বিষয়ক এক মত বিনিময় সভা করা হয়েছে।
Bagerhat-Photo(15.09.13)গতকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় রামপাল উপজেলা মিলনায়তনে এ সভা করে বিআইএফপিসিএল।
জানা গেছে, সুন্দরবনের পাশে কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকে কেন্দ্র করে পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের মাঝে সৃষ্ট বিরুপ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে বিআইএফপিসিএল প্রথম বারের মত রামপালে সুধী সমাজের সাথে এই মত বিনিময় সভা করেছে।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সভার প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল ওয়াহাব খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেসিসি এর সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিআইএফপিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভি এস তারাকার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিডিবিএর পরামর্শক খন্দকার আঃ আজিজ
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্যা আঃ রউফ, মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী ইজারদার, রামপাল ইউএনও মোঃ জিল্লুর রহমান, মংলা ইউএনও ড. মিজানুর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল জলিল, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান, স্কুল ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
মত বিনিময় সভায় অংশ নেয়া রামপাল ও মংলা উপজেলার নির্বাচিত নাগরিকদের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের গায়ে নির্মানাধীন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের জন্য কোন জোরালো দাবি উঠেনি বলে জনাগেছে। তবে এসময় কয়েক জন সুন্দরবনের পরিবেশের উপর এর বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে জানতে চান বলে জানান অনুষ্ঠেন অংশ নেওয়া কয়েক জন।
এসময় ভারতের উড়িষ্যা, কর্ণাটক ও তামিলনাড়–তে এই প্রকল্প কি কারণে বাস্তবায়ন করা যায়নি এমন এক প্রশ্নের জবারে প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভি এস তারাকার বলেন, সেখানে জমির উচ্চ মূল্য ও কয়লা পরিবহণের সুবিধার অভাব ছিলো।
সুন্দরবনের উপর এই প্রকল্পের ঝুঁকি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মো: আব্দুল ওয়াহাব খান বলেন, সুন্দরবনের উপর এই প্রকল্পের কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। বছরের মে ও জুন মাসের কিছু সময় ছাড়া সারা বছরই উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এই প্রকল্পে পৌনে ৩’শ মিটার উচ্চতার চিমনি ব্যবহার করা হবে।
সামান্য যে টুকু কার্বন ডাই অক্সাইড ও বিভিন্ন গ্যাস বের হবে তা বাতাসের উচ্চতর স্তরে চলে যাবে। ফলে সুন্দরবনের উপর কোন ধরণের প্রভাব পড়বে না  জানান তিনি।
তিনি বলেন, আপনারা অপপ্রচারে কান দেবেন না। কিছু মানুষ নিজেদের পরিবেশবাদী হিসেবে তুলে ধরে প্রকল্প সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এলাকায় কর্ম সংস্থান বাড়বে। মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হবে। প্রকল্পের টাকায় চিকিৎসা সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সৃষ্টি করে এলাকার মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পের পরামর্শক খন্দকার আজিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পে প্রতিদিন দশ হাজার টন কয়লা ব্যবহার করা হবে। এই কয়লা আমদানী করে আকরাম পয়েন্টে মাদার ভ্যাসেল থেকে বার্জ বা কার্গোতে করে প্রকল্প এলাকায় নিয়ে আসা হবে।
সুন্দরবনের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্পটের মাত্র কয়েক কিলোমিটারের ভেতরে অবস্থিত আকরাম পয়েন্টে কার্গো ওঠা-নামা করানোয় সুন্দরবনের বায়ু, পানি, বন ও প্রাণ বৈচিত্রের উপর কোন বিরুপ প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাওয়া হলে আয়োজকরা এই আশংকা উড়িয়ে দেন। তারা বলেন, কয়লা থাকবে মোড়কে [?] আবৃত। আকরাম পয়েন্ট এলাকায় প্রায় ৪ কি.মি. প্রস্থ নদীর ভেতরে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই কয়লা হ্যান্ডলিং করা হবে।
সিইজিআইএস প্রতিনিধি জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এই প্রকল্পে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ হবে নিয়ন্ত্রিত মাত্রার। বনায়ন বাড়িয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আর উন্নত প্রযুক্তির কারণে প্রকল্প থেকে কার্বন মনো অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড বা সালফারের মত ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক গ্যাস নির্গমণ হবে না [?]।
সভায় খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আবু হানিফ রামপালের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে এই এলাকার প্রতিটি গ্রামে আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ও এলাকার মানুষ বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্থদের সেখানে চাকরীর খোড়া দাবি জানান।
প্রকল্পটি সম্পর্কে জনগনের মাঝে যাতে কোন প্রকান বিভ্রান্তি না থাকে তার জন্য লিফলেট, পোস্টারসহ ব্যাপক প্রচারণার উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
সেই সাথে প্রকল্পটি বাস্তবায় হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক পরিবারের সদস্যদের এখানে চাকুরী দেওয়ার কথা বলা হয়।
উল্লেখ, এরই মধ্য প্রকল্পের জন্য বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের সাপমারী কাটাখালী এবং কৈগরদাসকাঠি মৌজায় ১৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহন করে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। সরকারি হিসাব অনুযাই সুন্দরবন এই প্রকল্প থেকে ১৪ কিঃমিঃ দক্ষিণে খুলনা শহর ২৩ কিঃমিঃ উত্তরে, আকরাম পয়েন্ট থেকে ৬৭ কিঃমিঃ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ থেকে ৭০ কিঃমিঃ এবং হিরণ পয়েন্টের দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার।

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ :: নিউজ ডেস্ক,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।

আইএইচ-এনএ/বিআই

About ইনফো ডেস্ক